পরীমনির জামিনদার কে এই তরুণ
![]() |
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল পৌনে দশটা। পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারের যানজট পেরিয়ে একটি সাদা রঙের গাড়ি এসে থামে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকে। তখন হাসিমুখে গাড়ি থেকে বের হন চিত্রনায়িকা পরীমনি। হেঁটে যান লিফটের সামনে। উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে লিফটে পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয় তাঁকে। এরপর লিফটে করে সাততলায় ওঠার পর আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে এজলাসকক্ষে ঢোকেন পরীমনি। তখনো পরীমনিকে একনজর দেখতে প্রচণ্ড ভিড়। এরপর বিচারক এজলাসে এলেন। পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত আদালতকে বলেন, পরীমনি এ মামলায় জামিনে ছিলেন। কখনো তিনি জামিনের অপব্যবহার করেননি। গতকাল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় আদালতে আসতে পারেননি। তিনি সব সময় আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাঁকে জামিন দেওয়ার আবেদন করছি। এ সময় পরীমনি দাঁড়িয়ে ছিলেন আসামির কাঠগড়ায়। আদালত এক হাজার টাকা মুচলেকায় পরীমনির জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিন মঞ্জুরের আদেশের পর পরীমনির মুখে ছিল হাসি। বিচারক এজলাস কক্ষ ত্যাগ করার পর পরীমনি তাঁর আইনজীবী ও তাঁর সঙ্গে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসিমুখে গল্প করতে থাকেন। আদালতকক্ষে দেখা যায়, ভক্তদের সঙ্গেও হাসিমুখে কথা বলছেন।
এরপর ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা ২৭ মিনিট। চিত্রনায়িকা পরীমনি এজলাসের ঠিক পেছনের বেঞ্চে বসা ছিলেন। তখন পরীমনির আইনজীবীরা জামিননামা লেখায় ব্যস্ত। পাঁচ মিনিটের মধ্যে জামিননামার প্রয়োজনীয় তথ্য লেখার পর জামিনদারের স্বাক্ষরের জন্য কাগজটি তরুণ গায়ক শেখ সাদীর হাতে যায়। তখন পরীমনি ঠিক তাঁর ডান পাশেই বসা ছিলেন। এ সময় শেখ সাদী জামিননামায় নিজের নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা লেখেন।
পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতে পরীমনি আসতে না পারায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে পরীমনিকে খবরটি জানান। পরীমনি সিদ্ধান্ত নেন, কালই (আজ সোমবার) তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন। আজ তিনি আদালত থেকে জামিনও পেয়ে যান।’
নীলাঞ্জনা রিফাত বলেন, ‘আদালতের জামিন আদেশের পর পরীমনির জামিননামা লেখা হয়। আমি জামিনদার হয়েছি। আরেকজন জামিনদার হয়েছেন শেখ সাদী। জামিননামাটি আদালতে জমাও দিয়েছি।’
জামিননামা জমা দেওয়ার পর আরও ১০ মিনিট পরীমনি ও শেখ সাদী পাশাপাশি বসা ছিলেন। তখন পরীমনিকে ঘিরে একদল আইনজীবী ও উৎসুক জনতা ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় আদালতের ওই এজলাস কক্ষের সামনে পরীমনিকে দেখার জন্য লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। তখন ঢাকা জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক আখতার হোসেন উৎসুক জনতাকে আদালতের সামনে থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তখন পরীমনি আদালতকক্ষের ভেতরে তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে হাসিমুখে গল্প করতে থাকেন। কোনো কোনো আইনজীবী তাঁর ছবিও তোলেন। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাততলার এজলাস কক্ষ থেকে তাঁকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে লিফটের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সাততলা থেকে লিফট নামতে সময় নেয় প্রায় ১০ মিনিট। পরীমনি যখন আদালত ভবনের নিচতলায় আসেন, তখন সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। এই ভিড় ঠেলে ঢাকার সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকের সামনে রাখা ডায়াসের কাছে যান। তখন পরীমনি হাসিমুখে কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু উৎসুক জনতার চিৎকার–চেঁচামেচিতে পরীমনির কথা গণমাধ্যমকর্মীরা ঠিকমতো শুনতে পারছিল না। একপর্যায়ে পরীমনি বিরক্ত হন। তিনি বলতে শুরু করেন, যদি চিৎকার–চেঁচামেচি করেন, তাহলে আমি কথা বলব না। তখন পরীমনি হাসিমুখে বলতে থাকেন, আমি আপনাদের এত ভালোবাসা পেয়েছি...। পরীমনি গণমাধ্যমকর্মীদের কথা বলা শেষ করে, সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারে চড়ে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন
0 Comments