Header Ads Widget

কোটা সংস্কার যেভাবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে পরিণত হলো

  কোটা সংস্কার যেভাবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে পরিণত হলো



বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের কোটা সংস্কারের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সরকারের দমন-নিপীড়নের মুখে তা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস ভূমিকার কারণে কয়েকশ নিরস্ত্র নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন হাজারো ছাত্র-জনতা। এক মাসের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের।

এক নজরে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনাবলী


মার্চ ২০১৮


কোটাভিত্তিক পদ কমানো, শূন্য পদে মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, ১০ শতাংশ পিছিয়ে থাকা জেলার মানুষদের জন্য, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য এবং এক শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা ছিল।


শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের বিক্ষোভ উপেক্ষা করে ২১ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটাব্যবস্থা বহালই থাকবে বলে ঘোষণা দেন।



এপ্রিল ২০১৮


প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সারাদেশে কয়েক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে, মিছিল বের করে এবং মহাসড়ক অবরোধ করতে শুরু করে।

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে অন্তত ৭৫ জন আহত হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর শাহবাগ মোড় ও এর আশেপাশের এলাকা।


১১ এপ্রিল শেখ হাসিনা কোটাব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাতিলের ঘোষণা দেন।


জুন-জুলাই ২০১৮


ওই বছরের ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করে।


৩ অক্টোবর ২০১৮


আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (যেসব পদ আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি বলে পরিচিত ছিল) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে আরও বলা হয়, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা বিবেচনা করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে।


৫ জুন ২০২৪


কোটা সংস্কারের দাবিতে এবার আন্দোলন শুরু হয় গত ৫ জুন। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, হাইকোর্ট সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।


এর প্রতিক্রিয়ায় ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। ঢাকায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয় এবং শহীদ মিনারে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।


২-৬ জুলাই ২০২৪


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'র ব্যানারে সংগঠিত হয় এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তি পুনঃবহালের দাবিতে টিএসসি এলাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে।


পরের কয়েকদিন দেশের অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে মিছিল-সমাবেশ করে।


গত ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৫ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন ৬ জুলাই শিক্ষার্থীরা 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির ডাক দেয়।


৭ জুলাই ২০২৪


শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে ঢাকা শহর স্থবির হয়ে যায়। এদিন ছয়টির বেশি ব্যস্ত সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ বিক্ষোভকে 'অযৌক্তিক' উল্লেখ করে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।


৮ জুলাই ২০২৪


অবরোধ ও বিক্ষোভ জোরালো হতে থাকে। এতে করে ঢাকাবাসী ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে ঢাকায় যাতায়াতে মারাত্মক অসুবিধা হয়। বিক্ষোভকারীরা একটি নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে সব অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়ার এক দফা দাবি জানান।


১০ জুলাই ২০২৪


সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।


এই রায় সত্ত্বেও সরকার একটি ডেডিকেটেড কমিশন এবং পরবর্তী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।




১১ জুলাই ২০২৪


এদিন হাইকোর্ট জানান, সরকার চাইলে কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে। কোটা পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পারবে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কোটা পদ্ধতি সংস্কারে সংসদে আইন প্রণয়ন না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।


পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সতর্কবার্তা দেয়, মন্ত্রীরা আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানালেও তা উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি পালন করে। কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়।




Post a Comment

0 Comments